মেথি একটি বহুমুখী উপাদান যা মসলা, পথ্য এবং খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর পাতা শাক হিসেবে জনপ্রিয় এবং মেথির বীজে রয়েছে অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা। কবিরাজী চিকিৎসায় মেথির ব্যবহার যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এবং আধুনিক বিজ্ঞানও এর পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতার প্রশংসা করেছে। মেথি বীজে এমন অনেক উপাদান রয়েছে যা শরীরের নানা সমস্যার সমাধান করে। চলুন, মেথির অসাধারণ স্বাস্থ্য গুণাগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।
মেথির পুষ্টিগুণ
মেথি বীজ প্রোটিন, ভিটামিন সি, পটাসিয়াম, আয়রন, জিঙ্ক, কপার, ম্যাগনেশিয়াম, এবং ক্যালসিয়ামের অনন্য উৎস। ১০০ গ্রাম মেথি শাক থেকে আপনি পাবেন:
- ৫০ ক্যালোরি শক্তি
- ১.৫ গ্রাম স্যাচুরেটেড ফ্যাট (৭%)
- ৬৭ মিলিগ্রাম সোডিয়াম (২%)
- ৭৭০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম (২২%)
- ৫৮ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট (১৯%)
- ২৩ গ্রাম প্রোটিন (৪৬%)
- প্রচুর পরিমাণে ফাইবার
মেথির স্বাস্থ্য উপকারিতা
১. শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে
মেথিতে স্টেরিওডাল সেপোনিনস নামক উপাদান রয়েছে যা শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া গ্লেক্টোম্যানান নামক উপাদান হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। পটাশিয়াম রক্তে লবণের পরিমাণ কমিয়ে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখে, ফলে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।
২. রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে
যাদের রক্তে চিনির পরিমাণ বেশি, তাদের জন্য মেথি ভেজানো পানি একটি প্রাকৃতিক সমাধান। গ্লেক্টোম্যানান উপাদান দেহে শর্করার শোষণ কমিয়ে দেয়, ফলে রক্তে সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়া মেথির অ্যামাইনো অ্যাসিড ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়।
৩. হজম শক্তি বৃদ্ধি
মেথিতে প্রচুর ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা বাওয়েল মুভমেন্ট উন্নত করে এবং হজমে সাহায্য করে। কনস্টিপেশনের সমস্যা দূর করতে সকালে খালি পেটে মেথি ভেজানো পানি খাওয়া যেতে পারে।
৪. ওজন কমাতে
প্রতিদিন সকালে মেথি ভেজানো পানি পান করলে তা শরীরের স্থূলতা কমাতে সাহায্য করে। মেথি শরীরে ফাইবারের মাত্রা বাড়িয়ে ক্ষুধা কমায় এবং অতিরিক্ত খাবার গ্রহণে লাগাম দেয়।
৫. জ্বর এবং সর্দি-কাশি সারাতে
আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট জ্বর এবং সর্দি-কাশি সারাতে মেথি বীজের পানি অত্যন্ত কার্যকর। মেথির উপাদান দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং জ্বরের প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে।
৬. চুল পড়া রোধে
মেথি বীজ চুল পড়া রোধে ব্যবহৃত হয়। স্বাস্থ্যহীন চুলের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে মেথি বাটা নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি চুলে মেখে কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেললে চুল পড়া বন্ধ হয়।
৭. ত্বক উজ্জ্বল রাখতে
মেথির রূপচর্চায় ব্যবহার অত্যন্ত কার্যকর। চেহারার বলিরেখা দূর করতে এবং চোখের নিচের কালো দাগ কমাতে মেথি ব্যবহার করা যায়।
৮. খুশকি দূর করতে
খুশকি দূর করতে মেথি এবং দইয়ের মিশ্রণ মাথায় লাগিয়ে তিরিশ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিত ব্যবহারে খুশকি দূর হবে।
৯. মহিলাদের ঋতুকালীন ও প্রসবজনিত সমস্যার সমাধানে
মেথিতে সাইটো-ইস্ট্রোজেন নামক উপাদান থাকে যা প্রোলাকটিন হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে ঋতুকালীন বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে সাহায্য করে। তবে গর্ভবতী মায়েদের অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে মেথি খেতে হবে।
১০. ক্যান্সার প্রতিরোধে
মেথি বীজের ক্যান্সার প্রতিরোধী উপাদান রক্তে টক্সিক উপাদানের মাত্রা কমিয়ে ক্যান্সার সেলের জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা কমায়। নিয়মিত মেথি শাক বা এর বীজ খেলে শরীরে ক্যান্সার সেলের জন্ম প্রতিরোধ করা যায়।
মেথি ব্যবহারের উপায়
মেথি বীজ এবং শাক রান্নায় ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া মেথি ভেজানো পানি পান করা এবং মেথি বাটা দিয়ে প্যাক তৈরি করা যায়। মেথি পাউডার করে বিভিন্ন ডিশে ব্যবহার করা যায়।
উপসংহার
মেথি একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা মসলা, পথ্য এবং খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এর অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে যা আপনার দৈনন্দিন জীবনে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। প্রাচীনকাল থেকে আজ পর্যন্ত মেথির পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা অম্লান। নিয়মিত মেথি ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি শরীরের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে পারেন।
মেথির ব্যবহারের মাধ্যমে সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপন করুন এবং এর অসাধারণ স্বাস্থ্য উপকারিতা উপভোগ করুন।