করলা, যার বৈজ্ঞানিক নাম Momordica charantia, অনেকের কাছে তেতো স্বাদের জন্য অপছন্দনীয় হলেও এর পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা অতুলনীয়। ভিটামিন, বিটা-ক্যারোটিন, ও বিভিন্ন খনিজ উপাদানে ভরপুর এই সবজিটি বিভিন্ন রোগের প্রতিরোধ ও নিরাময়ে কার্যকর। তাই করলা খাওয়ার গুরুত্ব আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় বাড়ানো উচিত। চলুন করলার পুষ্টিগুণ ও দশটি স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।
করলার পুষ্টি উপাদানসমূহ
করলা পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি সবজি। প্রতি ১০০ গ্রাম করলায় রয়েছে:
- খাদ্যশক্তি: ১৭ কিলোক্যালরি
- কার্বোহাইড্রেটস: ৩.৭০ গ্রাম
- প্রোটিন: ১ গ্রাম
- ফাইবার: ২.৮০ গ্রাম
- ফোলেট: ৭২ মাইক্রোগ্রাম
- নিয়াসিন: ০.৪০০ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন এ: ৪৭১ আইইউ
- ভিটামিন সি: ৮৪ মিলিগ্রাম
- সোডিয়াম: ৫ মিলিগ্রাম
- পটাসিয়াম: ২৯৬ মিলিগ্রাম
- ক্যালসিয়াম: ১৯ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম: ১৭ মিলিগ্রাম
এই পুষ্টি উপাদানগুলো করলাকে একটি অতুলনীয় সুপারফুডে পরিণত করেছে।
করলার স্বাস্থ্য উপকারিতা
করলা তেতো হলেও স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। নিম্নে করলার দশটি স্বাস্থ্য উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হলো:
১. ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ
করলায় থাকা চ্যারেটিন নামক উপাদানটি রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে করলার রস পান করলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায় এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
২. রক্ত পরিশুদ্ধ রাখা
রক্ত পরিশুদ্ধ রাখতে করলা অত্যন্ত কার্যকর। করলার রসে থাকা “ব্লাড পিউরিফাইং এজেন্ট” রক্তকে বিশুদ্ধ রাখতে সহায়তা করে। ফলে ত্বক, চুল ও সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে।
৩. পেটের বিভিন্ন রোগের প্রকোপ কমানো
করলায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ থাকে যা কনস্টিপেশনের মতো রোগের প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে। করলার ফাইবার গ্যাস্ট্রিক জুসের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে পেটের বিভিন্ন রোগের লক্ষণ কমতে শুরু করে।
৪. দেহের ওজন কমানো
করলার রস অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি হজম ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি জমার সুযোগ পায় না, ফলে দেহের ওজন হ্রাস পায়। করলার রস নিয়মিত খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৫. পাইলসের কষ্ট দূর করা
যাদের পাইলসের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়ম করে প্রতিদিন সকালে করলার রস পান করলে উপকার পেতে পারেন। এছাড়া করলা গাছের মূল বেটে পেস্ট করে পাইলসের উপর লাগালে আরাম পাওয়া যায়।
৬. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
করলার রস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। যারা প্রতিদিন করলার রস খান তাদের শরীর বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পায় এবং তারা অনেক বেশি সুস্থ থাকেন।
৭. দৃষ্টিশক্তি উন্নত করা
করলায় থাকা বিটা-ক্যারোটিন দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। নিয়মিত করলার রস পান করলে চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকে এবং বয়সজনিত চক্ষুরোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
৮. পিত্ত শ্লেষ্মাজনিত রোগ সারানো
ম্যালেরিয়া জ্বর হলে পিত্ত ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। করলার পাতার রস দিনে ২-৩ বার খেলে জ্বরের উপসর্গ কমে যায় এবং রোগীর আরাম হয়।
৯. পেটে গুঁড়ো কৃমি দূর করা
পেটে গুঁড়ো কৃমির সমস্যা থাকলে করলার পাতার রস খাওয়া উপকারী। বাচ্চাদের জন্য আধা চা চামচ করে এবং বয়স্কদের জন্য ১-২ চা চামচ পরিমাণ খেলে উপকার পাওয়া যায়।
১০. ক্যান্সার প্রতিরোধ
করলায় রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধী উপাদান যা শরীরের সেলের বৃদ্ধি আটকিয়ে দেয়। এছাড়া এটি অ্যানিমিয়া এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগের চিকিৎসাতেও কার্যকর।
করলা কেন খাওয়া উচিত?
বাজারে সারাবছরই করলা পাওয়া যায়। ভাজি, ভর্তা ও ঝোলে করলার স্বাদ অসাধারণ। তিতা হলেও করলা সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর। তাই স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তিরা করলা নিয়মিত খেয়ে এর ঔষধি গুণাগুণ উপভোগ করতে পারেন। করলা খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
সুতরাং, করলার পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা মাথায় রেখে আজ থেকেই করলা খাওয়া শুরু করুন এবং নানা প্রকার অসুখ-বিসুখ থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।