বাজারে গেলে আমরা নানা ধরনের সবজি কিনি, তবে শীতকালে বিট নামক একটি সবজি আমরা প্রায়ই এড়িয়ে চলি। অথচ এই বিটের রয়েছে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর অসাধারণ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা। চলুন, বিট খাওয়ার কিছু চমৎকার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিই।
বিটের পুষ্টি গুণাগুণ
বিটে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, ক্লোরিন, আয়রন ও সোডিয়াম সহ নানা পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এতে কোলেস্টেরল নেই এবং প্রতি ১০০ গ্রাম বিটে ৪৩ ক্যালোরি শক্তি পাওয়া যায়। নিম্নে এর পুষ্টি গুণাগুণ দেওয়া হলো:
- পলিসেচুরেটেড ফ্যাট: ০.২ গ্রাম
- সোডিয়াম: ৭৮ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম: ৩২৫ মিলিগ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট: ১০ গ্রাম (আঁশ ২.৮ গ্রাম ও চিনি ৭ গ্রাম)
- প্রোটিন: ১.৬ গ্রাম
- ভিটামিন সি: ৮%
- ভিটামিন বি ৬: ৫%
- আয়রন: ৪%
- ম্যাগনেসিয়াম: ৫%
বিটের বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা
বিটের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান শরীরকে সুস্থ রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ডায়াবেটিস থেকে শুরু করে অ্যানিমিয়া, উচ্চ রক্তচাপ ও থাইরয়েড সমস্যার ক্ষেত্রে বিট অত্যন্ত উপকারী। নিম্নে বিটের বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা বর্ণনা করা হলো:
১. অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ
রক্তাল্পতা সমস্যা যাদের রয়েছে তারা বিট খেলে অনেক উপকার পেতে পারেন। বিটে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে যা রক্তের যোগান দিয়ে রক্তাল্পতা দূর করতে সহায়তা করে। মহিলাদের অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যা ও কম পিরিয়ড হলেও বিট উপকারি। বিট শরীরে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধিতেও কার্যকরী।
২. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য বিট খুব উপকারী। বিটে থাকা নাইট্রেট নামক উপাদান রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে এবং স্ট্রোক প্রতিরোধে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বেশি বিট খায় তাদের উচ্চ রক্তচাপ কম থাকে।
৩. লিভারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি
নিয়মিত ফাস্ট ফুড খাওয়ার কারণে লিভারের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। বিট হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে সাহায্য করে এবং বদহজম, জন্ডিস ও ডায়রিয়ার মতো পেটের সমস্যায় উপকারী। ফ্যাটি লিভারের সমস্যা নিয়ন্ত্রণেও বিট কার্যকর।
৪. দেহের শক্তি বৃদ্ধি
বিট পেশীর শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং দ্রুত এনার্জি যোগান দেয়। জিম করার পর ক্লান্ত লাগলে বিটের রস পান করলে মুহূর্তেই এনার্জি ফিরে পাওয়া যায়।
৫. হাড় মজবুত রাখা
বিট হাড় মজবুত রাখতে সহায়তা করে। এটি শরীরে ক্যালসিয়াম ধরে রাখতে সাহায্য করে, ফলে হাড়ের সমস্যা প্রতিরোধে কার্যকর। যারা নিয়মিত বিট খান তাদের বৃদ্ধ বয়সে হাড়ের সমস্যায় ভুগতে হয় না।
৬. ডিপ্রেশন দূর করা
বিটে বিটেইন ও ট্রিপটোফোন নামক উপাদান রয়েছে যা মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। ডিপ্রেশন দূর করতে বিটের সরবত খুবই উপকারী।
৭. ত্বক ভালো রাখা
বিটে অ্যান্টি-এজিং গুণাগুণ রয়েছে যা ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সহায়তা করে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং ব্রণ ও বলিরেখা দূর করতে বিট কার্যকর। প্রতিদিন একগ্লাস বিটের সরবত খেলে ত্বক উজ্জ্বল হয়।
৮. ক্যান্সার প্রতিরোধ
বিটে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে খুবই কার্যকর। এটি শরীর থেকে ক্ষতিকারক টক্সিন বের করে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
বিটের প্রাচীন ও আধুনিক ব্যবহার
প্রাচীনকাল থেকেই বিটের অনেক কদর রয়েছে। শীতের মৌসুমে সতেজ ত্বক এবং সুস্থ দেহের জন্য বিট খাওয়া অত্যন্ত উপকারী। বিটের স্বাস্থ্য উপকারিতা জেনে আমরা এখন এটি খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারি। শীতের সবজি বিট আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি সৌন্দর্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।
বিটের আরও কিছু উপকারিতা
বিটের আরও কিছু উপকারিতা রয়েছে যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত বিট খেলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং আমরা সুস্থ থাকি।
বিট খাওয়ার পরামর্শ
বিট কাঁচা বা রান্না করে খাওয়া যায়। বিটের রসও খুব উপকারী। যাঁরা শীতের মৌসুমেও সতেজ ত্বক চান এবং শরীর ফিট রাখতে চান তাঁদের জন্য বিট একটি সেরা সবজি। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বিট যোগ করুন এবং নিজেকে সুন্দর ও সুস্থ রাখুন।